বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন বিভিন্ন প্রস্তুতি নিলেও টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে এমনটাই জানা গেছে।
নিম্নচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীতে কখনও ভারী আবার কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। বুধবার (২১ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে টানা বর্ষণের ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন জেলার শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ্ বলেন, সাগরে কোনো মাছ ধরার ট্রলার নেই। নদীতে দুই একটি থাকতে পারে। ইলিশ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টির পানিতে যাতে মাছের ঘের ভেসে না যায় সেজন্য চাষিদের ঘরে জাল দিয়ে রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক কাজী কেরামত বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৮৯.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা পটুয়াখালীর গত ৪ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড।বরগুনায় টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে পানি বেড়েছে জেলার প্রধান নদ-নদীর। তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেতসহ শত শত মাছের ঘের।একনাগাড়ে বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বরগুনা জেলা শহর থেকে শুরু করে ছয়টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা। বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি জমেছে। জলমগ্ন জেলার সিংহভাগ অংশ।
গত বুধবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে এখনও পর্যন্ত অব্যহত রয়েছে। তিনদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে মাঠে-ঘাটে থইথই করছে পানি। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে।বরগুনার উপর দিয়ে প্রবাহিত পায়রা-বলেশ্বর ও বিষখালি তিনটি নদীরই জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়েছে।বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিম্নচাপ ও ভারি বর্ষণের ফলে নদীর পানি তিনফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে উপকূলের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।
বরগুনা পাউবোর পানি পরিমাপক মাহতাব হোসেন জানান, সবশেষ জোয়ারে বরগুনার তিনটি নদীর পানিই স্বাভাবিকের চেয়ে তিনফুট বেড়েছে।জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আমনের মৌসুমে ধানে শীষ ধরেছে। এমন ভারী বর্ষণে জেলার কয়েক লাখ হেক্টর আবাদি আমনের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও শীতের আগাম সবজি চাষও চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে বরগুনায় মৎস্যখাত সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শত শত মাছের ঘের ইতোমধ্যেই পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আমরা তালিকা তৈরি করার কাজ শুরু করেছি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম বলেন, জেলায় এখন পর্যন্ত কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর আমরা পাইনি। তবে বেশ কিছু স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ আছে। এরকম টানা বৃষ্টি থাকলে সেগুলো ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা প্রস্তুত রয়েছি।এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, সমুদ্রে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা তিন দিনের ভারি বর্ষণে বরগুনার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে ঘর থেকে বের হতে পারছে না সাধারণ মানুষ। এতে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।